আত্নিক শুদ্ধতায় রমজান

প্রকাশঃ জুন ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:০৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ramadan-moon-sightingরহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে বছর ঘুরে আবারও এল পবিত্র মাহে রমজান। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে রমজানের সিয়াম সাধনা। সারা দেশেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আজ রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবেন। শেষ রাতে সেহরি খেয়ে আত্মনিবেদন করবেন সিয়াম সাধনায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে রোজাদারেরা রিপু ও প্রবৃত্তিকে দমন করে আত্মসংযমের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করবেন আত্মশুদ্ধির। মহান আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের আশায় মগ্ন থাকবেন বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগিতে। আর দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে পানাহার বন্ধ থাকবে। বিকেল থেকেই বসে যাবে ইফতারির পসরা।

এ মাসে আল্লাহর সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতের পাশে ধন্য হয়। এ নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস উপস্থিত। এটা অতিশয় রহমত-বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। পবিত্র এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এ রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকলো, সে প্রকৃতই সবকিছু থেকে বঞ্চিত। (আহমাদ ও নাসাঈ)Resize-of-Iftar_beguni

মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজানে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনার জন্য উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এ মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তোমাদের দিকে শুভ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন, তোমাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অধিক সৎ কাজ করে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পারে, আল্লাহ তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যক্ষ করতে থাকেন ও ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। তোমরা অনেক বেশি সৎ কাজ করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ থেকে এ মাসে একমাত্র হতভাগ্যরাই বঞ্চিত থাকে।

নবী করিম (সা.) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার মতো আল্লাহর আশিসধারা রোজাদারদের অন্তররাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)109

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাহে রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করে, ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকে; এমন রোজাদার ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদারেরা এতে অবগাহন করে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতপবিত্র হয়ে যায়। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই। (সূরা আল-ফাতির)

রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তাই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। ১. রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। ২. সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। ৩. প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। ৪. আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, “তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে ramadan-19_fahaheel_kuwait-4এসে বিশ্রাম নেবে।” ৫. রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘এটা কি লাইলাতুল কদর?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, তুমি দেখোনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়?’ (বায়হাকী)

বান্দার কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করার জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ রমজান মাসকে বিশেষ রহমত হিসেবে প্রতিবছর পাঠিয়ে দেন, যাতে তারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করে ধন্য হতে পারে। যারা অপরিণামদর্শী, তারা এসবের খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, বিভিন্ন অজুহাতে রোজা রাখে না, অশালীনতা, বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে পানাহার করে—এসব অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য কাজ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি প্রদত্ত অবকাশ ও অসুস্থতা ব্যতীত রমজান মাসের একটি দিনও রোজা ভঙ্গ করে, জীবনভর রোজা রাখলেও তার পরিপূরক হবে না।’ (তিরমিজি)

যে রমজান মাসকে আল্লাহ তাআলা এত অধিক মর্যাদা, রহমত, বরকত ও পুণ্যময় করেছেন, সেই মহান মাসের প্রতি সবারই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা উচিত।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G